নিরাপদ গেমিং এখনকার গেমার এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়
এখনকার সময়ে এই জেনারেশনের জন্য গেমিং হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের মনোরঞ্জন ও বিনোদনের সবচেয়ে প্রিয় মাধ্যম হিসেবে। তা বলা সত্ত্বেও, একজন গেমারের উচিৎ বেশ কিছু স্পেশাল ধাপ এবং প্র্যাক্টিসের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া, যাতে আমাদের অ্যাক্টিভিটিগুলো কাটে আনন্দের সাথে এবং একই সাথে যেন আমরা থাকি সুস্থ। এই পোস্টে এবার আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বেশ কিছু টিপ্স এবং ট্রিক্স, যা আপনাকে পরবর্তীতে সাহায্য করবে একটি যথাযথ গেমিং হ্যাবিট তৈরিতে।
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা
চোখগুলোকে রক্ষা করুন, ব্রেক নিন। এই ব্যাপারটি দয়া করে একদম সিরিয়াসলি নিবেন! অনবরত গেমিং চলতে থাকলে তার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে ব্রেক নেয়া খুবই জরুরী। কোনো মিশন কমপ্লিট করতে যেয়ে অথবা কোনো ফাইট জিততে চাওয়ার জন্য তাই বলে ঘন্টার পর ঘন্টার স্ক্রিনের সাথে ভুলেও লেগে থাকবেন না। অতিরিক্ত সময় ধরে টিভি বা মনিটরের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকলে চোখে প্রেশার পড়তে পারে এবং ক্লান্তি চলে আসতে পারে।
ঘুম বাদ দেয়া যাবে না! ঠিক আছে, মেনে নিলাম আপনার বর্তমানে খেলতে থাকা গেমটি একদমই অ্যাডিক্টিং, যার কারণে আপনি নেক্সট মিশন কমপ্লিট অথবা আপনার সেই সম্পূর্ণ নতুন নেক্সট উইপেন আনলক করার আগ পর্যন্ত থামতে পারছেন না। এটা বলা সত্ত্বেও, গেমারদের শেখা প্রয়োজন যে, যতই তাদের গেমের মিশন বা কোয়েস্ট সেরা হোক না কেনো, তাদের সকলের সবসময় একটি পর্যাপ্ত ঘুমের রুটিন পালন করা উচিৎ। এই বিষয়গুলো যেন ভুলবশত হলেও আপনার নরমাল বডি ক্লকের সাইকেলকে যেনো ডিস্টার্ব না করতে পারে, কারণ এতে করে আপনার ঘুমের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসতে পারে, যা পরবর্তীতে আরো নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পূর্ণ ঘুম আপনার জন্য রিয়েল ওয়ার্ল্ড পাওয়ার আপ।
হাতের এবং কবজির স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা। এই ব্যাপারটি আসলেই সত্য যে ইনজুরি যেকোনো কারণে হতে পারে, এমনকি আপনি যদি ভিডিও গেমও খেলেন তাতেও, বিশেষ করে আপনি যদি ইস্পোর্টসের মতো প্রতিযোগিতামূলক খেলা খেলে থাকেন।অফুরন্ত সময় ধরে অতিরিক্ত লেভেলের কন্ট্রোলারের ব্যবহার অথবা কিবোর্ডে মাত্রাতিরিক্ত টাইপিং বা বুড়ো আঙ্গুলের ট্যাপিংয়ের কারণে কার্পাল টানেল সিনড্রোমের দেখা মিলতে পারে, যা আপনার গেমিং ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পারে যদি আপনি ঠিকমত ম্যানেজ করতে না পারেন। আপনি চাইলে সিম্পল কিছু এক্সারসাইজ করতে পারেন খেলার ব্রেকের মাঝে, যাতে করে আপনার হাত ও কবজি ভালো থাকে।
মোশন গেমিং আপনাকে রাখবে চলন্ত। বর্তমানে মার্কেটে অনেক পপুলার গেম আছে যা ডিজাইন করা হয়েছে একদম এক্সারসাইজের উপর ভিত্তি করে যেমন- নাচের ভিডিও গেম (জাস্ট ড্যান্স, ড্যান্স রেভোলিউশন) এবং অনেক টাইপের রিদম টাইটেল (গিটার হিরো)। ব্যাপারটি পুরো ২-ইন-১ প্যাকেজের মতো, যেখানে আপনার অলস বিশ্রামের সময়টা রুপান্তরিত হয় সাথে সাথেই এক্সারসাইজে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) গেমগুলোও একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম যেখানে এক্সারসাইজের সিমুলেশন তৈরি করা যায় যেমন- বক্সিং বা স্কোয়াট রুটিনের মতো আরো নানা ধরনের গেম।
গেম খেলুন, সুখী থাকুন। কিছু মানুষ প্লাগ ইন করে রিলাক্স করতে চায়, একটু দম নিতে চায়। গেম খেলা তাদের মাঝে রিলাক্সিং একটা ব্যাপার নিয়ে আসে এবং তাদের স্ট্রেস কন্ট্রোল করতে সাহায্য করে। বন্ধুদের সাথে কো-অপ মোডে গেম খেলা তাদের মাঝে বন্ডিং বাড়াতে আরো সাহায্য করে (যা অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না), যত কাছেই বা যত মাইল দূরে থাকুক না কেনো তারা। গেমের ভেতর টিমওয়ার্কের সাথে কিছুটা সোশ্যাল ইন্টারেকশন বা সামাজিক কুশল বিনিময় বেশ স্বস্তি ও আরামের ব্যাপার। এই ক্ষেত্রে এনিমেল ক্রসিং ট্রাই করে দেখতে পারেন সকলেই। আলটিমেটলি, যদি গেম খেলা আপনাকে সুখী রাখতে পারে, তাহলে ব্যাপারটা মোটেও মন্দ নয়, তাই না?
অভিভাবকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভিডিও গেম খেলার সময় নিরাপত্তার ব্যাপারে একটি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সম্পর্কে পূর্ণ ও ক্লিয়ার ধারনা রাখতে পারলে সহজে বুঝতে পারা সম্ভব একটি গেমে কী কী আছে – গেমটির কনটেন্ট এবং তার গ্রহণযোগ্যতা উভয় ব্যাপারেই।
বয়সের শ্রেণিবিন্যাস । একটি গেমের বয়সের উপযুক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর যা আমাদের মাথায় রাখা উচিৎ। আপনি কি ESRB (Entertainment Software Rating Board)-এর সাথে পরিচিত? এটি একটি গেম (অথবা অ্যাপ) এর ব্যাপারে এমন সব তথ্য প্রকাশ করে থাকে, যা অভিভাবক ও সাধারণ ক্রেতাদের অবগত করে কোন গেমগুলো পারিবারিক সেটিংয়ের জন্য উপযোগী। ESBR রেটিংয়ের আছে ৩ টি পার্ট: রেটিং ক্যাটাগরি, কনটেন্ট ডেসক্রিপশন, এবং ইন্টার্যাক্টিভ এলিমেন্টস। বিবরণ সহ, ESRB রেটিংকে আপনার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন, যেখানে গেমটি আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত নাকি না।
একাউন্ট সেট-আপ ও প্রাইভেসি। এখন অধিকাংশ গেমই এখন তাদের ইউজারদের একটি একাউন্ট রেজিস্টার করা ও তৈরি করা লাগে খেলা শুরু করার আগে। গেমগুলোর প্রাইভেসি ডিটেইল্স নিয়ে বিস্তারিত চোখ রাখা উচিৎ, কারণ অধিকাংশ গেমই ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড। আপনার সন্তানকে পাসওয়ার্ড তৈরির সময় সহায়তা করুন। একটি Two-Factor Verification Method খুব সহজেই সিকিউরিটির লেভেল বাড়াতে সাহায্য করবে। সাবধানতা অবলম্বনের জন্য আপনি আপনার সন্তানের প্রোফাইলের লোকেশন তুলে নেয়ার পদক্ষেপও চিন্তা করে দেখতে পারেন।
অনলাইনে বিদ্রুপ আচরণ প্রতিহত করা। বিভিন্ন ধরনে ফিচারের ক্ষেত্রে যেমন: চ্যাট সহ কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের আরয নানা ধারায়, সন্তানদের অনলাইনে খেলার সময় তাদের সাথে খেলা অন্যান্য প্লেয়ারদের ঝামেলাপূর্ণ আচরণ প্রতিহত করা আমাদের কাছে অভিভাবক হিসেবে খুবই প্রয়োজনীয় মনে হয়। গার্ডিয়ানরা এই ব্যাপারটি খুবই সহজে আগে আগেই থামাতে পারে, গেম সেটিংয়ে থাকা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ঘেটে। ভয়েস চ্যাটের মতো ফাংশনগুলো সীমিত আকারে অথবা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করলে অনেক সময়ে ভালো উপকারে আসতে পারে।
গেমটি নিজেই একবার ট্রাই করে দেখুন। আপনি যদি তাও পুরোপুরি সমঝতায় না আসেন, তাহলে গেমটি নিজেই খেলে দেখুন। এইভাবে, আপনি গেমটির প্লট আর গেম মেকানিক্স সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পাবেন। এছাড়াও আপনি গেমটি খেললে খুব সহজেই অনুমান বা আন্দাজ করতে পারবেন গেমটির মধ্যে যদি কোনো সহিংসতাপূর্ণ আচরণ বা অবস্থা, রক্তক্ষয়ী এবং অন্যান্য নেতিবাচকমূলক উপাদান থাকলে তা কম বয়স্ক শিশুদের জন্য উপযুক্ত নাকি না। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কি আমার বাচ্চাকে এই গেম খেলতে দিলে পুরোদমে শান্তিতে রিলেক্স করতে পারবো?”।
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, গেমিংয়ের ব্যাপারটা অনেকটা নেতিবাচকভাবে দেখার কারণ হতে পারে আনহেল্দি বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে অনেকে গেমিং মনে করেন। কিন্তু এই স্টেরিওটাইপ থেকে আরো পজিটিভ কোনো অবস্থানে ব্যাপারটি আনা একদম সম্ভব এবং একমাত্র তখনই সম্ভব যদি এই পোস্টে উল্লেখ্যিত এই সকল সহজ ঝামেলাহীন প্র্যাক্টিসগুলো শুরু করা যায় এবং পরবর্তীতে পুরোপুরি আয়ত্বে আনতে পারা যায়।